নেপালের বর্তমান সরকারী অবস্থান এবং এই সংকটের কারণ

নেপালে চলমান রাজনৈতিক সংকট এখন চরমে পৌঁছেছে। প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি পদত্যাগ করার পরও বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে, এবং সেনাবাহিনী দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারের বর্তমান অবস্থান কী এবং কেন এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

প্রথমে বর্তমান সরকারের অবস্থান। ৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী ওলি পদত্যাগ করেছেন, যা দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ঘটনা। তিনি সেনা ছাউনিতে আশ্রয় নিয়েছেন। এরপর বিক্ষোভকারীরা সংসদ ভবন, সুপ্রিম কোর্ট, রাষ্ট্রপতির বাসভবন এবং প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদর দপ্তরও ধ্বংস করা হয়েছে। এখন সেনাবাহিনী ৯ সেপ্টেম্বর রাত ১০টা থেকে নিরাপত্তা দায়িত্ব নিয়েছে। সেনাপ্রধান অশোক রাজ সিগদেল শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন এবং সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পৌড়েলও বিক্ষোভকারীদের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য সহযোগিতা করতে বলেছেন। বর্তমানে কোনো নতুন সরকার গঠন হয়নি, এবং দেশ অস্থায়ীভাবে সেনা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সরকারের অবস্থান হলো শান্তি পুনরুদ্ধার এবং সংলাপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান।

এখন প্রশ্ন, কেন এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো? সংকটের মূল কারণ ৪ সেপ্টেম্বর সরকারের সামাজিক মাধ্যম নিষিদ্ধকরণ। যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের নতুন নিয়ম অনুসারে ফেসবুক, এক্স, ইউটিউব সহ ২৬টি প্ল্যাটফর্ম নিবন্ধন না করায় নিষিদ্ধ করা হয়। এটি জেনারেশন জি-এর মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভ সৃষ্টি করে, কারণ নেপালের মধ্যবয়স ২৫ এবং সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা। এছাড়া দুর্নীতি, সরকারী কর্মকর্তাদের বিলাসিতা এবং নেপোটিজম (পরিবারতন্ত্র) মূল কারণ। সামাজিক মাধ্যমে 'নেপো কিড' ট্রেন্ড সরকারী পরিবারের ধনসম্পদ প্রকাশ করে জনরোষ বাড়ায়। গড় বার্ষিক আয় মাত্র ১৪০০ মার্কিন ডলার হলেও রাজনীতিবিদদের বিলাসিতা লক্ষণীয়।

৮ সেপ্টেম্বর কাঠমান্ডুতে বিক্ষোভ শুরু হয়। এনজিও হামি নেপালের নেতৃত্বে হাজার হাজার যুবক মাইতিঘর মণ্ডলা এবং সংসদের কাছে জমায়েত হয়। পুলিশ টিয়ার গ্যাস, জলকামান, রাবার বুলেট এবং লাইভ অ্যামুনিশন ব্যবহার করে। ফলে ১৯ জন নিহত, ৩৪৭ জন আহত (অনানুষ্ঠানিক সংখ্যা ৪২২)। সন্ধ্যায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয় এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক পদত্যাগ করেন। কিন্তু বিক্ষোভ না থামায় কারফিউ জারি করা হয়।

৯ সেপ্টেম্বর ওলির পদত্যাগের পরও অশান্তি অব্যাহত। বিক্ষোভকারীরা সিংহ দুর্বার, সুপ্রিম কোর্ট, শীতল নিবাস এবং বালুয়াতারে আগুন ধরায়। ইউএমএল এবং নেপালি কংগ্রেসের সদর দপ্তর ধ্বংস হয়। কয়েকজন মন্ত্রী এবং সাংসদ পদত্যাগ করেন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা এবং তাঁর স্ত্রী আহত হন, ঝালা নাথ খানালের স্ত্রী আগুনে মারা যান। কারাগার থেকে বন্দীদের মুক্ত করা হয়, যার মধ্যে রবি লামিছানে রয়েছেন।

১০ সেপ্টেম্বর সেনা প্যাট্রোলিং করে গ্রেফতার শুরু করেছে। বিক্ষোভকারীরা সরকারী ভবন এবং রাজনীতিবিদদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। মোট নিহত ২৩, আহত অনেক।

এই সংকটের পিছনে দীর্ঘদিনের দুর্নীতি, অর্থনৈতিক সুযোগের অভাব এবং যুবকদের হতাশা। নেপালের অর্থনীতি সংকটে, বেকারত্ব উচ্চ। সামাজিক মাধ্যম নিষিদ্ধকরণকে সেন্সরশিপ হিসেবে দেখা হয়েছে, যা বিক্ষোভকে উস্কে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতীয় ঐক্য সরকার না গঠিত হলে দীর্ঘস্থায়ী অস্থিরতা হতে পারে। কাঠমান্ডুর মেয়র বালেন্দ্র শাহকে সম্ভাব্য নেতা হিসেবে দেখা হচ্ছে, এবং রাজতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আলোচনা চলছে।

এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় শান্তির আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘ শান্তি পুনরুদ্ধারের জন্য আহ্বান করেছে। নেপালের ভবিষ্যত নির্ভর করছে সংলাপ এবং সংস্কারের ওপর।

Address

3721 2nd Street
Saltlake Sector V, Kolkata 700 091

Contacts

+91 98300 71925
Contract.subhendu.etv@gmail.com