ছত্তিশগড়ে বাড়তি সিপিআই (মাওবাদী) আত্মসমর্পণ: আমিত শাহের ২০২৬-এ মাওবাদী আন্দোলন শেষের ঘোষণা

নয়াদিল্লি: ভারতের কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রী আমিত শাহের নেতৃত্বে চলমান অভিযানের ফলে ছত্তিশগড়ের বাস্তর অঞ্চলে সিপিআই (মাওবাদী) সংগঠনের সদস্যদের আত্মসমর্পণের হার দ্রুত বাড়ছে। শাহ মাওবাদীদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন যে, ২০২৬ সালের মার্চ মাসের মধ্যে মাওবাদী আন্দোলনকে সম্পূর্ণরূপে শেষ করে দেওয়া হবে। এই ঘোষণা ছত্তিশগড়ের নিরাপত্তা বাহিনী এবং স্থানীয় সরকারের জন্য একটি বড় লক্ষ্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সাম্প্রতিককালে ছত্তিশগড়ের বিজাপুর জেলায় ৫০ জনেরও বেশি মাওবাদী, যাদের মধ্যে উচ্চপদস্থ সদস্যরা ছিলেন এবং মোট পুরস্কারের পরিমাণ ৬৮ লক্ষ টাকা, আত্মসমর্পণ করেছে। এর মধ্যে পিএলজিএ ব্যাটালিয়ন নম্বর ১-এর সদস্য রবীন্দ্র করম (পুরস্কার ৮ লক্ষ টাকা) এবং ন্যাশনাল পার্ক এরিয়া কমিটির সদস্য ভীমা ওয়াম (পুরস্কার ৫ লক্ষ টাকা) অন্তর্ভুক্ত। এই আত্মসমর্পণগুলি 'নিয়াদ নেল্লানার' নীতির অধীনে সম্পন্ন হয়েছে, যা মাওবাদী-মুক্ত গ্রামগুলিকে ১ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প প্রদান করে।

আমিত শাহ বাস্তরের পান্ডুম উৎসবে উপস্থিত হয়ে বলেছেন, "গুলি এবং বোমা দিয়ে উন্নয়নকে আটকানো যায় না। মাওবাদীরা আত্মসমর্পণ করে মূলধারায় যোগ দিন। সরকার তাদের নিরাপত্তা এবং পুনর্বাসনের নিশ্চয়তা দিচ্ছে।" তিনি যোগ করেছেন যে, ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণু দেও সাই এবং উপমুখ্যমন্ত্রী বিজয় শর্মার নেতৃত্বে শান্তি প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়। শাহের এই বক্তব্য মাওবাদীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে, যা সাম্প্রতিক আত্মসমর্পণের কারণ।

সিপিআই (মাওবাদী) সংগঠন নিজের পক্ষ থেকে একটি চিঠিতে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য 'অভয়'-এর স্বাক্ষরিত এই চিঠিতে বলা হয়েছে, "জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও গৃহমন্ত্রী আমিত শাহের আহ্বানের প্রেক্ষিতে আমরা অস্ত্র ত্যাগ করতে প্রস্তুত।" তবে, সরকার এই চিঠির সত্যতা যাচাই করছে। ছত্তিশগড় পুলিশ বলেছে, "বিষয়টি পরীক্ষা করা হচ্ছে।"

এছাড়া, তেলেঙ্গানায় কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজাতা (পুরস্কার ১ কোটি টাকা) আত্মসমর্পণ করেছেন। তিনি ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানা এবং মহারাষ্ট্রে দশকেরও বেশি সময় ধরে সক্রিয় ছিলেন। এই আত্মসমর্পণ মাওবাদী সংগঠনের উপর চাপ বাড়িয়েছে। সরকারের অভিযানে ২০২৫ সালে মাওবাদী নেতা বাসবরাজু এবং বালকৃষ্ণসহ অনেক উচ্চপদস্থ নেতা নিহত হয়েছেন।

২০০০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ছত্তিশগড়ে ১৬,৭৮০ জন নক্সলবাদী আত্মসমর্পণ করেছে। এর মধ্যে ২০২৫ সালে ৩১৪ জনেরও বেশি শুধুমাত্র ভাদ্রাড্রি কোঠাগুড়েম জেলায় আত্মসমর্পণ করেছে, যারা ছত্তিশগড়ের বিজাপুর থেকে। 'অপারেশন চেয়ুথা' এই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করেছে।

গৃহমন্ত্রী শাহের ঘোষণা অনুসারে, মাওবাদী আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তিনি বলেছেন, "আমরা মার্চ ২০২৬-এর মধ্যে লেফট উইং এক্সট্রিমিজমকে উচ্ছেদ করব।" এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান তীব্র করেছে, এমনকি বর্ষাকালেও। মাওবাদীরা আত্মসমর্পণ না করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ছত্তিশগড় সরকার শীঘ্রই নতুন আত্মসমর্পণ নীতি ঘোষণা করবে, যা মাওবাদীদের পুনর্বাসনকে সহজ করবে। এই নীতিতে আর্থিক সাহায্য, চাকরির সুযোগ এবং সামাজিক একীকরণের ব্যবস্থা থাকবে। শাহের ভ্রমণের পর এই নীতি প্রণয়ন করা হচ্ছে।

মাওবাদী আন্দোলন ভারতের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে দশকের পর দশক ধরে চলছে, কিন্তু সরকারের দৃঢ়তার ফলে এটি সীমিত হয়ে পড়েছে। ছত্তিশগড়ের বনাঞ্চলে মাওবাদীদের কার্যকলাপ কমছে, এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলি দ্রুত এগোচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং পরিচয়পত্রের মতো মৌলিক সুবিধা প্রদান করে স্থানীয়দের মূলধারায় ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে মাওবাদী সংগঠনের অভ্যন্তরীণ চাপ বাড়ছে। তাদের নেতৃত্ব হতাশ, এবং অনেকে আত্মসমর্পণের পথ বেছে নিচ্ছে। সরকারের শান্তি আহ্বান এবং অভিযানের সমন্বয়ে ২০২৬-এর লক্ষ্য অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এটি ছত্তিশগড়ের উন্নয়নের নতুন অধ্যায় শুরু করবে।

Address

3721 2nd Street
Saltlake Sector V, Kolkata 700 091

Contacts

+91 98300 71925
Contract.subhendu.etv@gmail.com