ইবোলা ভাইরাসের ভয়াবহতা: আফ্রিকায় নতুন প্রাদুর্ভাব, ভারতে সতর্কতা জারি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং ভারত সরকারের সতর্কবাণীতে সারা দেশে উদ্বেগের সঞ্চার হয়েছে। আফ্রিকার ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো (ডিআরসি)-তে ৪ সেপ্টেম্বর নতুন ইবোলা ভাইরাস প্রাদুর্ভাব ঘোষণা করা হয়েছে, যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ভয় তুলেছে। এই ভাইরাসের কারণে ২৮টি সন্দেহজনক কেস এবং ১৫টি মৃত্যুর খবর এসেছে, যার মধ্যে ৪ জন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন। মৃত্যুর হার প্রায় ৫৪ শতাংশ, যা এই ভয়াবহ রোগের ভয়ংকরতা তুলে ধরে। ভারতে এখনও কোনো নিশ্চিত কেস না থাকলেও, আন্তর্জাতিক যাতায়াতের কারণে ঝুঁকির আশঙ্কা বাড়িয়েছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

ইবোলা ভাইরাস, যা ফিলোভাইরিডি পরিবারের অর্থোয়েবোলাভাইরাস জাতির সদস্য, ১৯৭৬ সালে প্রথম আফ্রিকায় শনাক্ত হয়। এর প্রধান প্রজাতি যাইরে ইবোলাভাইরাস (ইবোভি), সুডান ইবোলাভাইরাস (সুডভি) এবং অন্যান্য। লক্ষণগুলি সংক্রমণের ২-২১ দিন পর শুরু হয়—জ্বর, মাথাব্যথা, পেশীব্যথা, বমি, ডায়রিয়া এবং অভ্যন্তরীণ রক্তপাত। এটি শরীরের তরল হারানোর কারণে অঙ্গ বিকল হয়ে যায় এবং মৃত্যু হয়। সংক্রমণ শুরু হয় সংক্রামিত প্রাণী (যেমন ফল খাওয়া বাদুড়) থেকে মানুষে, তারপর মানুষ থেকে মানুষে রক্ত, শরীরের তরল বা দূষিত বস্তুর মাধ্যমে। যৌন সংক্রমণও সম্ভব, বিশেষ করে পুনরুদ্ধারকারীদের মধ্যে। ২০১৪-২০১৬-এর পশ্চিম আফ্রিকার মহামারীতে ২৮,৬০০-এর বেশি কেস এবং ১১,৩২৫ মৃত্যু হয়েছে, যা ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঘটনা।

ভারতে ইবোলার কোনো স্থানীয় কেস রেকর্ড হয়নি, কিন্তু বিশাল অভিবাসী জনসংখ্যা এবং আন্তর্জাতিক যাত্রীদের কারণে ঝুঁকি রয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় (এমওএইচএফডব্লিউ) এবং জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (এনসিডিসি) যৌথভাবে সতর্কতা জারি করেছে। বিমানবন্দর, রেলস্টেশন এবং সীমান্তে স্ক্রিনিং বাড়ানো হয়েছে। ডিআরসি বা অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে আগত যাত্রীদের থার্মাল স্ক্যানিং এবং ২১ দিনের মনিটরিং করা হবে। স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পিপিই কিট, আইসোলেশন ওয়ার্ড এবং ল্যাব টেস্টিং ব্যবস্থা শক্তিশালী করা হয়েছে। ডব্লিউএইচও-র নির্দেশে ভ্যাকসিন (যেমন আরবিএসএস জাইরে) এবং এক্সপেরিমেন্টাল চিকিত্সা (মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি) স্টক রাখা হচ্ছে।

সরকারের পরামর্শ: ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যাতায়াত এড়িয়ে চলুন, অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়ান, হাত ধোয়া এবং স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। যদি জ্বর বা রক্তপাতের লক্ষণ দেখা যায়, তাৎক্ষণিক চিকিত্সা নিন। সিডিসি এবং ডব্লিউএইচও-র মতে, ভারতে ঝুঁকি কম কিন্তু সতর্কতা অপরিহার্য। এই প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে আনতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানো দরকার। ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রস্তুত, কিন্তু জনসচেতনতাই প্রধান অস্ত্র।

Address

3721 2nd Street
Saltlake Sector V, Kolkata 700 091

Contacts

+91 98300 71925
Contract.subhendu.etv@gmail.com