লজিস্টিক সেক্টরকে শিল্প মর্যাদা: কর্মসংস্থান, লগ্নী ও লজিস্টিক চ্যালেঞ্জ ২০২৬ নির্বাচনে পরিবর্তনের খেলা?


সম্প্রতি রাজ্য ক্যাবিনেটের সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে লজিস্টিক সেক্টরকে শিল্প মর্যাদা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা খাতের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে সরকারি উৎসাহপ্রদান, ব্যাঙ্ক ঋণের সহজলভ্যতা এবং বিনিয়োগ আকর্ষণের পথ প্রশস্ত হবে। কিন্তু এর পেছনে লুকিয়ে আছে কর্মসংস্থানের অভাব, অর্থায়নের জটিলতা এবং লজিস্টিক চ্যালেঞ্জের মতো বাস্তবতা। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে এই খাত কীভাবে রাজনৈতিক খেলার মাঠ বদলে দিতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতি দেশের ষষ্ঠ বৃহত্তম, যা মোট জিডিপির প্রায় ৬.১৫ শতাংশ অবদান রাখে। কিন্তু শিল্প খাতের পতন এবং অনানুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের হ্রাস রাজ্যকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করেছে। জাতীয় পরিসংখ্যান অফিসের তথ্য অনুসারে, রাজ্যে বেকারত্বের হার উল্লেখযোগ্য, বিশেষ করে যুবকদের মধ্যে। লজিস্টিক খাতে এই সমস্যার সমাধানের সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ এটি পরিবহন, গুদামাগারি এবং সাপ্লাই চেইনের মাধ্যমে হাজারো চাকরি সৃষ্টি করতে পারে। সম্প্রতি মাহিন্দ্রা লজিস্টিকস মালদায় ১.১ লক্ষ বর্গফুটের একটি ফুলফিলমেন্ট সেন্টার চালু করেছে, যা প্রতিদিন ১০ হাজার পণ্য প্রক্রিয়াকরণ করবে এবং প্রায় ৭৫০ জনকে কর্মসংস্থান প্রদান করবে। এছাড়া, পিএম গতি শক্তি এবং প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেনটিভ (পিএলআই) স্কিমের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় অর্থায়ন আনার সম্ভাবনা রয়েছে, যা ইলেকট্রনিক্স এবং উৎপাদন খাতকে শক্তিশালী করবে।
তবে চ্যালেঞ্জগুলো অগ্রাহ্য করা যায় না। অর্থায়নের অভাবে ছোট লজিস্টিক কোম্পানিগুলো ব্যাঙ্ক ঋণ পেতে অসুবিধার্গস্ত। রাজ্যের শিল্প বিনিয়োগের ঐতিহাসিক পতন—বিশেষ করে মার্কসবাদী শাসনকালের প্রভাবে—এখনও লেগে আছে। লজিস্টিক খাতে অবকাঠামোর দুর্বলতা, যেমন দুর্বল রেল-সড়ক সংযোগ এবং বন্দরের অদক্ষতা, খরচ বাড়িয়ে তুলছে। এছাড়া, শ্রম আইনের জটিলতা এবং বাধ্যতামূলক শুল্ক ব্যবস্থা বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করছে। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে, যদিও লক্ষ লক্ষ চাকরির সম্ভাবনা রয়েছে, তবু অনানুষ্ঠানিক খাতের হ্রাসে যুবকরা মাইগ্রেশনের শিকার হচ্ছে। শ্রম কমিশনারেটের তথ্য অনুসারে, রাজ্যে শ্রমিক কল্যাণের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প চললেও, ন্যূনতম মজুরি এবং গ্র্যাচুইটির বাস্তবায়ন অপর্যাপ্ত।
২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে এই খাত রাজনৈতিক খেলা বদলে দিতে পারে। তৃণমূল কংগ্রেস সরকার ‘মমতানমিক্স’ মডেলকে তুলে ধরে ভোটারদের আকর্ষণ করছে, যেখানে লজিস্টিককে শিল্প মর্যাদা দিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে। বিজেপি এবং বামফ্রন্টের মতো বিরোধীরা অবকাঠামোর দুর্বলতা এবং কেন্দ্রীয় তহবিলের অপব্যবহারের অভিযোগ তুলে ধরছে। নির্বাচন কমিশনের সাম্প্রতিক উদ্যোগ, যেমন ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন এবং পোলিং পার্সোনেলের জন্য অনলাইন পোর্টাল চালু, নির্বাচনী প্রস্তুতিকে ত্বরান্বিত করছে। যদি লজিস্টিক খাতে সফলতা আসে, তাহলে তৃণমূলের জয়ের পথ সহজ হবে; অন্যথায়, বেকারত্বের ইস্যু বিরোধীদের হাতিয়ার হয়ে উঠবে।
এই সিদ্ধান্ত রাজ্যকে পূর্ব ভারতের লজিস্টিক হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে, যা বাণিজ্য এবং রপ্তানিকে উজ্জীবিত করবে। কিন্তু সফলতার জন্য সরকারকে অবকাঠামো উন্নয়ন, দক্ষতা প্রশিক্ষণ এবং বিনিয়োগকারী-বান্ধব নীতির উপর জোর দিতে হবে। ২০২৬-এর নির্বাচন এই খাতের ভবিষ্যতকে নির্ধারণ করবে, যা শুধু অর্থনৈতিক নয়, রাজনৈতিকভাবেও পরিবর্তনের খেলা বদলে দেবে।
Address
3721 2nd Street
Saltlake Sector V, Kolkata 700 091
Contacts
+91 98300 71925
Contract.subhendu.etv@gmail.com