পুজোর আগে সুখবর, দার্জিলিংয়ে ফিরছে ১৩০ বছরের পুরনো স্টিম ইঞ্জিন


পৃথিবীর অন্যতম বড় রেল নেটওয়ার্কগুলির মধ্যে ভারত প্রথম সারিতে রয়েছে। শুধুমাত্র আয়তনে নয় আধুনিকতায় দিনদিন এগিয়ে চলেছে দেশ। বন্দেভারতের জনপ্রিয়তা শুধুমাত্র দেশেই নয় বিদেশেও বেড়ে চলেছে। একইসঙ্গে বুলেট ট্রেন ক্লাবের সদস্যও হয়ে গিয়েছে ভারতীয় রেল। তবুও কোথাও যেন স্টিম ইঞ্জিনের জনপ্রিয়তা এখনও একই রকম রয়ে গিয়েছে। চিমনি দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে কু-ঝিক-ঝিক শব্দে এগিয়ে চলা ব্ল্যাক বিউটির প্রেমে মশগুল আট থেকে আশি। আর এই স্টিম ইঞ্জিন লাভারদের জন্য সুখবর নিয়ে এলো ভারতীয় রেল। দার্জিলিঙে ফিরতে চলছে ১৩০ বছরের পুরনো স্টিম ইঞ্জিন।
দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে (DHR)—যা UNESCO ঘোষিত একটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট—এবার দুর্গাপুজোর ঠিক আগে তাদের অন্যতম প্রাচীন স্টিম ইঞ্জিন, Sharp, Stewart & Co: 777-B–কে আবার সচল করার উদ্যোগ নিচ্ছে। এই ইঞ্জিনটি “খেলনা ট্রেন”-এর পাহাড়ি সফরে এক নতুন আকর্ষণ যোগ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
১৬ টনের এই ইঞ্জিনটি তৈরি হয়েছিল ১৮৮১ সালে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরের অ্যাটলাস ওয়ার্কসে। এক সময় এটি দার্জিলিংয়ের সরু গেজের লাইনে চলত, কিন্তু ১৯৫৭ সালে অবসর নেওয়ার পর এটি দিল্লির ন্যাশনাল রেলওয়ে মিউজিয়ামে প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়। দীর্ঘদিন ধরে এটি শুধুই দর্শনের বস্তু ছিল। এবার একে ফেরত আনা হচ্ছে। দার্জিলিংয়ের টিনধারিয়া ওয়ার্কশপে একবার এর সংস্কার হয়েছিল ১৯১৭ সালে।
DHR-এর ডিরেক্টর ঋষভ চৌধুরী জানান, “আমরা ইতিমধ্যেই সবুজ সংকেত পেয়ে গেছি। ইঞ্জিনটি টিনধারিয়ায় পৌঁছলেই, দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আমাদের দল একে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা শুরু করবে। ভাবুন তো, খেলনা ট্রেনে চড়া নয়—এক জীবন্ত ইতিহাসের অধ্যায়ে পা রাখছেন!”
১৯১৩ সালে স্থাপিত এবং ১৯২৭ সালে সম্প্রসারিত টিনধারিয়া ওয়ার্কশপ এখনো DHR-এর লাইফলাইন হিসেবে কাজ করে চলেছে। এখানে বর্তমানে ১৩টি সচল স্টিম ইঞ্জিন রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। ৬,৬৭০ বর্গমিটারের এই কর্মশালাটি দার্জিলিংয়ের স্টিম হেরিটেজের টিকে থাকার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
পুজো পর্যটনে নতুন গতি
এই পুনর্জীবনের সময় বেছে নেওয়া হয়েছে দুর্গাপুজোর ঠিক আগে, যখন দার্জিলিংয়ে দেশি-বিদেশি পর্যটকের ঢল নামে। চা-বাগান আর পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথে স্টিম ইঞ্জিনের ধোঁয়া উড়িয়ে চলা দৃশ্য নিঃসন্দেহে হেরিটেজপ্রেমীদের আকৃষ্ট করবে। হিমালয়ান হসপিটালিটি ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, “ওয়ার্ল্ড রেলওয়ে ডে আসছে। এই সময়ে যদি DHR এই ধরনের একটি উপহার পায়, তাহলে সেটি পর্যটকদের জন্যই নয়, সম্পূর্ণ হেরিটেজের জন্যই এক বিশেষ প্রাপ্তি হবে।”
এক প্রতীকী প্রত্যাবর্তন
স্টিম ইঞ্জিন ৭৭৭-বি-র যাত্রা দীর্ঘ ও বৈচিত্র্যময়। হিমাচল প্রদেশ থেকে দার্জিলিং, সেখান থেকে দিল্লির জাদুঘরে কয়েক দশক, এবং এবার ফের ফিরে আসা সেই পাহাড়ি রেলপথে। এর সিরিজে মোট ৩২টি ইঞ্জিন তৈরি হয়েছিল, যার মধ্যে অল্প কয়েকটিই আজ অবধি টিকে আছে। ফলে এই ইঞ্জিনটির পুনরুদ্ধার পাহাড়বাসীর জন্য গর্বের।
যদি এই পুনরুদ্ধার সফল হয়, তাহলে গুয়াহাটি, হাওড়া ও দিল্লিতে পড়ে থাকা অন্য পুরোনো ইঞ্জিনগুলোকেও পুনরুজ্জীবিত করার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। আপাতত দার্জিলিং অপেক্ষা করছে সেই দিনের জন্য। যেদিন আবার বেজে উঠবে ৭৭৭-বি–র বাঁশি, আর তার সঙ্গে বয়ে আনবে শুধুই পর্যটকদের নয়, বরং ইতিহাসের এক অমূল্য ঝংকার।
Address
3721 2nd Street
Saltlake Sector V, Kolkata 700 091
Contacts
+91 98300 71925
Contract.subhendu.etv@gmail.com