অসুরের উত্তরাধিকারী রয়েছে পাশের রাজ্যেই, দুর্গাপুজোয় তাঁরা যা করে


দুর্গাপুজোর জন্য সারা বছর অপেক্ষা করে থাকে বাঙালি। পুজো যত কাছে আসতে থাকে আনন্দের ঢেউ তত বাড়তে থাকে। ঘরবাড়ি সাজানো, নতুন জামাকাপড় পরে ঠাকুর দেখা, ভালো ভালো খাবার খাওয়া ইত্যাদি তো হয়েই থাকে। এই সময় পুজোর গান, নতুন নতুন সিনেমা দেখা, অনেকে আবার এই সময়ে বেড়াতেও যান। মা দুর্গার অসুর বধের জন্য মর্ত্যেই যেন স্বর্গীয় সুখ নেমে আসে। একই উৎসব অন্য রাজ্যগুলিতে নবরাত্রি হিসেবে পালিত হয়। কিন্তু অসুর জনজাতি এই সময় কী করে?
পূর্বপুরুষের হত্যার প্রতিবাদে দুর্গা পুজোতে শোক পালন করে অসুর জনজাতি
ঝাড়খণ্ডের গুমলা এবং আশপাশের অঞ্চলে বসবাসকারী অসুর জনজাতির মানুষ এই সময় শোক পালন করে। তাদের কাছে মহিষাসুর কোনো রাক্ষস নয়, বরং তিনি তাদের পূজ্য পূর্বপুরুষ এবং এক শক্তিশালী রাজা ছিলেন। অসুর সম্প্রদায়ের মানুষ নবরাত্রির ন'দিন শোক পালন করে। এই সময় তাঁরা কোনো শুভ কাজ করে না। নতুন কাপড় পরে না এবং কোনো রকম আনন্দ উদযাপনও করে না। গুমলা জেলার ডুমরি গ্রামের দহারু অসুরের মতে, তারা ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত শোক পালন করে। এই সময় তাঁরা সব কাজ রাতেই সারেন এবং দিনে ঘর থেকে বাইরে থাকে না। তাদের দাবি, দেবী দুর্গা তাদের পূর্বপুরুষ মহিষাসুরকে হত্যা করেছিলেন। তাঁদের লোকগাথা হিন্দু পুরাণে বর্ণিত কাহিনীর সম্পূর্ণ বিপরীত। তাঁদের মতে, রাজা মহিষাসুর নারীদের অত্যন্ত সম্মান করতেন এবং এতটাই শক্তিশালী ছিলেন যে কোনো নারীর সঙ্গে যুদ্ধ করতেন না। দেবতারা আশঙ্কা করেছিলেন, যদি মহিষাসুর বেঁচে থাকেন, তাহলে মানুষ দেবতাদের পূজা করা বন্ধ করে দেবে।
মহিষের পুজো এবং সিংহের মূর্তি ধ্বংস করা হয়
দুর্গার বাহন সিংহ। অসুর বধ করতে সিংহকে বিশেষ ভূমিকা নিতে দেখা যায়। সিংহ তাই শৌর্য ও বীরত্বের প্রতীক উঠেছে। আবার যেহেতু অসুর মহিষের রূপ ধারণ করেছিলেন তাই মহিষকে নেতিবাচক মনে করা হয়ে থাকে। কিন্তু অসুর সমাজের কাছে এটা সম্পুর্ন বিপরীত। তাঁরা দুর্গাপুজো করে না বরং মহিষই তাঁদের পূজনীয়। এবং সিংহের মূর্তি তাঁরা ধ্বংস করে থাকে। এটি তাদের দীর্ঘদিনের বিশ্বাসের প্রতীক।
দিন দিন কমে আসছে অসুর সমাজের জনসংখ্যা
ঝাড়খণ্ডে অসুরদের সংখ্যা খুবই কম। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, ঝাড়খণ্ডে এদের সংখ্যা ছিল প্রায় ২২,৪৫৯ এবং বিহারে ৪,১২৯ জন। এরা সুকুয়াপানি, চাইবাসা ও গুমলা জেলার গ্রাম ও জঙ্গলে বসবাস করেন। এই সম্প্রদায় দীপাবলির সময় 'সোহরাই' উৎসব পালন করে। এই দিন তারা তাদের নাভি, বুক ও নাকে এক ধরনের বিশেষ তেল মাখে, যা এই বিশ্বাসের প্রতীক যে তাদের সম্রাট মহিষাসুরের রক্তও এই স্থানগুলো থেকে প্রবাহিত হয়েছিল। তারা চাল থেকে তৈরি মদ এবং মুরগির মাংস তাদের পূর্বপুরুষদের উৎসর্গ করে এবং প্রসাদ হিসেবে তা গ্রহণ করে।
অসুর সমাজকে নিয়ে কথিত রয়েছে অনেককিছু
বলা হয়ে থাকে, মহিষাসুর নিহত হওয়ার পর এই জনজাতি জঙ্গলে ছড়িয়ে পড়ে এবং লোহার সামগ্রী তৈরির কাজ শুরু করে। তাঁদের তৈরি অস্ত্রও বিখ্যাত হয়ে পড়ে। এই জনজাতির মানুষের বিশ্বাস, মহাভারতের যুদ্ধে এই অসুরদের তৈরি অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছিল। এমনকি মগধ সাম্রাজ্যেও এই অসুরদের তৈরি অস্ত্র ব্যবহৃত হতো। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, সম্রাট অশোকের সময় তৈরি যে লৌহস্তম্ভ রয়েছে, তাতে ব্যবহৃত লোহাও এই জনজাতির মানুষদের দ্বারা তৈরি ছিল। এই লোহার গুণমান এতটাই উন্নত ছিল যে আজও তাতে মরচে ধরেনি।


Address
3721 2nd Street
Saltlake Sector V, Kolkata 700 091
Contacts
+91 98300 71925
Contract.subhendu.etv@gmail.com