শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের জল্পনা, কী হচ্ছে বাংলাদেশে?


ভারত কি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তাঁর দেশে ফিরিয়ে দেবে? এই প্রশ্ন ঘিরে বাংলাদেশে তীব্র জল্পনা ছড়িয়েছে, বিশেষ করে সোমবার নয়াদিল্লিতে সফররত বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিস্রির বক্তব্যের পর।
সূত্র অনুযায়ী, মিস্রি একটি প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, হাসিনার প্রত্যর্পণ একটি “বিচারিক ও আইনি প্রক্রিয়া”, যার জন্য দুই দেশের সরকারের মধ্যে যোগাযোগ ও আলোচনার প্রয়োজন। পররাষ্ট্রসচিব বলেন, “আমরা এই বিষয়গুলো পর্যালোচনা করছি।”। তিনি আরও জানান, ভারত এই বিষয়ে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতায় প্রস্তুত রয়েছে।
বাংলাদেশে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
ঢাকায় রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে বিক্রম মিস্রির বক্তব্য নানা ভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। কিছু বিশ্লেষকের মতে, এই প্রথমবার কোনো শীর্ষ ভারতীয় কর্মকর্তা শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন নিয়ে একটি ইতিবাচক মন্তব্য করলেন। গত বছরের অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ সরকার ভারতের কাছে একটি ‘নোট ভার্বাল’ (আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক যোগাযোগপত্র) পাঠিয়ে হাসিনার প্রত্যাবর্তনের অনুরোধ করেছিল। তখন ভারত অনুপূর্ণ কাগজপত্রের অজুহাতে এই বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে জানা যায়।
তবে অন্যরা মনে করছেন, মিস্রির বক্তব্যটি কেবল প্রক্রিয়াগত—তিনি এই ইস্যুটির আইনানুগ দিকগুলো বোঝাতে চেয়েছেন, বাস্তব কোনো পদক্ষেপের ইঙ্গিত নয়। বিশ্লেষকদের মতে, এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে ত্বরিত সমাধানের সম্ভাবনা কম, কারণ এটি বিস্তৃত আইনি ও দ্বিপাক্ষিক আলোচনার বিষয়। ঢাকার রাজনৈতিক মহলের অনেকেই মনে করছেন, ভারত এই বিষয়ে এখনই নয়, বরং বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর আলোচনায় বসবে।
সম্ভাব্য রায় বাড়াতে পারে চাপ
এদিকে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত। ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আগামী অক্টোবরের শেষ বা নভেম্বরের শুরুতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রায় ঘোষণা করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই সপ্তাহেই সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে হাসিনার প্রত্যার্পণের জন্য বাংলাদেশের চাপ ভারতের ওপর আরও বাড়তে পারে।
তবে নয়াদিল্লির কূটনৈতিক সূত্রের দাবি, ভারত এর আগে ঢাকার কাছ থেকে নিরাপত্তা সংক্রান্ত নিশ্চয়তা চাইবে। কারণ, শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতের অতিথি হিসেবে অবস্থান করছেন, এবং তাই তাঁর প্রত্যার্পণের আগে নিরাপত্তা ও সুবিচারের নিশ্চয়তা নিশ্চিত করা ভারতের অধিকার।
আওয়ামী লীগের অবস্থান
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার মতে, শেখ হাসিনা হয়তো নিজ ইচ্ছায় দেশে ফিরে আসবেন, যদি তিনি মনে করেন যে তাঁকে ন্যায়বিচার দেওয়া হবে। সম্প্রতি দলের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এক ভাষণে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি বিচারের মুখোমুখি হতে ভয় পাই না”। তাঁর সমর্থকরা দাবি করছেন, বাংলাদেশে বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছে, এবং জেলে দলের কর্মীদের হত্যা বা নির্যাতনের খবর সামনে এসেছে।
আওয়ামী লীগ দাবি করেছে, মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী প্রশাসন তাদের কর্মীদের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে। দলটির অভিযোগ, ৪০ জনেরও বেশি কর্মীকে হেফাজতে মারধর করে চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
এখনো কোনও সরকারি ঘোষণা নেই
বর্তমানে ভারত ও বাংলাদেশ দুই দেশই এই ইস্যুতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। শেখ হাসিনার প্রত্যার্পণ বা স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তন সংক্রান্ত কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনো আসেনি।
কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই বিষয়ে যেকোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নির্ভর করবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, ভবিষ্যতের নির্বাচিত সরকারের সিদ্ধান্ত এবং ভারতের নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক মূল্যায়নের উপর।
Address
3721 2nd Street
Saltlake Sector V, Kolkata 700 091
Contacts
+91 98300 71925
Contract.subhendu.etv@gmail.com